Pages

Saturday, June 08, 2013

সম্পর্কের সন্ধানে



 ভালোবাসার মতো পবিত্র বন্ধনে যারা বাঁধা পড়েছেন, বিয়ের পিঁড়িতে বসার জন্য অতো সাতপাঁচ ভাবার সময় হয়তো তাদের কখনোই হয় না। কিন্তু ভালোবাসার বাইরে দাঁড়িয়ে যারা এখনো অপেক্ষায় আছেন তাদের মনের মানুষের তাদের জন্যই নতুন সম্পর্কের সন্ধানে নামার কিছু পরামর্শ রইলো আমাদের এবারের আয়োজনে। লিখেছেন হাসান মাহমুদ
জন্মের সুতীব্র চিৎকারের মধ্য দিয়ে যখন একটি শিশু
পৃথিবীতে তার উপস্থিতির জানান দেয়, তখন সে আনন্দ উদ্বেলিত করে তোলে অন্যদের। এর বিপরীতে একজন মানুষের মৃত্যুর কান্না যখন সবাইকে কাঁদায় তখনো তার অনুভূতির বসবাস অজানার দেশে। অথচ জন্ম আর মৃত্যুর মাঝে, যাত্রা শুরু আর শেষের মাঝে, প্রথম আনন্দ আর শেষ দুঃখের মাঝে বিয়ে যেন একান্তই আপন এক অনুভূতি। এই একটি অনভূতির মাঝেই মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ। আর এই অনুভূতি, হোক তা দীর্ঘ প্রতিক্ষিত কিংবা আকস্মিকতার মাঝে মিলে যাওয়া এক চিলতে সময়; একে স্বপ্নের রঙে রাঙিয়ে তুলতে চেষ্টার কমতি থাকে না কারো মাঝেই। বিয়ে মানে দুই হৃদয়ের এক হবার সংবিধান। বিয়ে মানে এক ছাদের নিচে সুখে-শান্তিতে বসবাসের অলিখিত এক অঙ্গীকার। কিন্তু যে মানুষটিকে নিয়ে শুরু এক অজানা স্বপ্নের সেই মানুষটির কি দেখা মেলে সহসাই! জানি প্রতিবাদ করবেন অনেকেই। সুখী দাম্পত্যের অধিকারী অনেকে হয়তো এক নিশ্বাসে বলে যাবেন তাদের বিয়ের সময়কার মজার নানা ঘটনা। অথবা যে তরুণ অগণিত স্বপ্ন নিয়ে বসে আছে তার স্বপ্নকণ্যার বাহুলগ্না হবার – সেও নিশ্চয়ই জানিয়ে দেবে আবেগ অনুভূতির একটা বিশাল ফিরিস্তি। তবু সন্দেহপ্রবণ বাস্তবতা আর হিসেবী মনের হিসেবে একে একে চলে আসে অনেক কথকতাই। মনের মানুষ কিংবা বিয়ের পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের আগেও তাই নামতে হয় সম্পর্কের সন্ধানে। একটা সুন্দর সম্পর্কের সন্ধানে যারা ইতোমধ্যেই জড়িয়ে পড়েছেন ভালোবাসার মতো পবিত্র বাঁধনে, তাদের কাছে আর সব কথাই নেহাত তুচ্ছ। আর তাই আমাদের এই কথামালা শুধু তাদেরই জন্য যারা এখনো ভালোবাসার বাইরে থেকে খুঁজে ফিরছেন তাদের মনের মতো একজন মানুষকে। এক্ষেত্রে অনেকেই হয়তো মনের মানুষ খুঁজে নেয়ার জন্য নানা রকম উপায়-বুদ্ধি বাতলে দেবেন। তবে তাদের সেসব কথায় কান দেয়ার আগে নতুন সম্পর্কে জড়ানোর জন্য আপনি কতোটা প্রস্তুত সেটা একবারও ভেবে দেখেছেন কি? আসলে প্রতিনিয়ত আমাদের আশপাশে যতো মানুষ বিয়ে করছেন তাদের একটি বড় অংশই কিন্তু এ প্রশ্নটার উত্তর না খুঁজেই বসে যান বিয়ের পিঁড়িতে। আর তাই নতুন জীবনে একটা বড়সর ধাক্কা খেতেও তাদের তেমন একটা সময় লাগে না। এর মাঝে ছেলেদের ক্ষেত্রে বিয়ে করার মাপকাঠি হিসেবে নিজের পায়ে দাঁড়ানো আর মেয়েদের ক্ষেত্রে সৌন্দর্য কিংবা বয়সের মতো ক্লিশে বিষয়গুলোই হয়তো সবার সামনে বড় হয়ে দেখা দেয়। কিন্তু এর বাইরেও এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো একটা ভাল সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। উদাহরণস্বরূপ যে ছেলেটি আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই তার প্রিয় মানুষের গলায় বিয়ের মালা পড়াতে যাচ্ছে তাকে কিন্তু আগে থেকেই জেনে রাখতে হবে এক ছাদের নিচে থাকার সুবিধা-অসুবিধার কথা। সেই সাথে থাকতে হবে নতুন কিছু দায়িত্ব পালনের মতো ধৈর্য্য আর স্থিরতা। অন্যদিকে যে মেয়েটি আপাত অজানা এক পরিবারের সাথে রচনা করতে যাচ্ছে নতুন কিছু দিন, তাকেও জানতে হবে ধৈর্যের সাথে সবকিছু বুঝে নিয়ে নিজের স্বকীয়তা প্রকাশের ব্যাকরণ। হয়তো সময়ই এক সময় সবাইকে শিখিয়ে দেয় সবকিছু। কিন্তু সময়ের আগেই যারা ভাবতে জানেন আগামীর কথা তারা নিশ্চয়ই অনেকটাই এগিয়ে থাকেন অন্যদের চেয়ে। সম্পর্কের খোঁজে যারা নামেন তারা অনেকেই হয়তো মেয়েদের ক্ষেত্রে সৌন্দর্য আর ছেলেদের ক্ষেত্রে সামর্থ্যটাকেই সর্বাগ্রে বিবেচনায় রাখেন। তবে এসব কিছুর বাইরে দাঁড়িয়ে ছেলে-মেয়ের মানসিকতার বিবেচনাটিও এখন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। কেননা স্বভাবতই একজন মুক্তমনা মানুষ যেমন তার রক্ষণশীল সঙ্গীর সাথে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না তেমনি রোমান্টিক মনের একজন তরুণীকেও হাঁপিয়ে উঠতে হয় তার উচ্চাভিলাশি সঙ্গীর সাথে গড়ে ওঠা অসম মানসিক সম্পর্কে। কাজেই যারা ভালোবাসার বাইরে সম্পর্ক তৈরি করছেন পারিবারিক মধ্যস্থতায় তাদের জন্য এই বিষয়গুলো বুঝে নেয়ার চেষ্টাটা জরুরি। সেই সাথে নিজের কোনো অপ্রকাশ্য বিষয়, যেটি হয়তো বিয়ের পর প্রকাশিত হলে কেবল সম্পর্কের মাঝে তিক্ততাই বাড়াবে, সেটিও অকপটে স্বীকার করা উচিত সকলের ভালর জন্যই। এছাড়া কাউকে পাবার জন্য কিংবা সম্পর্কের খোঁজে সফল হবার জন্য এমন কোনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দেয়া উচিত নয় যেটি রাখতে পারাটাই আপাত অবাস্তব।
বিয়ে শুধু দু’টি মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক হলেও এর সাথে জড়িয়ে থাকে পরিবারের বহু মানুষের আবেগ আর অনুভূতি। কাজেই আপনার আগামী দিনের সঙ্গী বা সঙ্গিনী উভয়েরই জানা উচিত উভয়ের পরিবার সম্পর্কে। আর এসব ক্ষেত্রে নিজে যেমন ছাড় দিতে জানতে হবে তেমনি অন্যকেও স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখতে হবে পরিবারের অপরিবর্তনীয় মনোভাবগুলো সম্পর্কে। আবার জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনী’র রক্তের গ্রুপ কিংবা তার শরীরে বসত গড়া মারাত্মক কোনো রোগের কথাও যথাসাধ্য জানার চেষ্টা করতে হবে চূড়ান্ত সম্পর্কে জড়ানোর আগেই।
এমনি করে একটি সঠিক সম্পর্কের খোঁজে হয়তো আরো অনেক বিষয়ই স্থান পেতে পারে মানুষ আর পরিবেশ ভেদে। তবে সব কথার শেষ কথা হিসেবে যে কথাটি কখনোই ভুলার নয় তাহলো, পরিচিত এই পৃথিবীর কোনো মানুষই হয়তো সবদিক দিয়ে সম্পূর্ণ নয়। দু’একটি অসম্পূর্ণতা আছে বলেই সে এই মর্তলোকের মানুষ। আর তাই অন্যের অসম্পূর্ণতার সন্ধান করার আগে ভাবতে হবে নিজের কথাও। আর যেখানে একটা সুস্থ-সুন্দর জীবনই দুই হৃদয়ের সংবিধানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেখানে সম্পর্কের সন্ধানে নেমে অতি মাত্রায় ‘পারফেকশনিস্ট’ না হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ফেব্রুয়ারী ০২, ২০১০

0 comments:

Post a Comment

Blogger Tips and TricksLatest Tips And TricksBlogger Tricks
 
^ Back to Top